shape
Published

July 18, 2023

No Comments

Join the Conversation

View

385 Views

ছোট বেলায় ক্যালেন্ডারের পাতা, পোস্টার-স্টিকারে ‘সিডনি অপেরা হাউস’ ও ‘ডার্লিং হারবার ব্রিজ’ এর কত্তো ছবি দেখেছি। সময় আন্তাজ নেই। তবে, ছবিগুলো মনে গেঁথে আছে আজও। ভাবতাম- যদি স্থাপনাগুলোর সামনে কখনও দাঁড়াতে পারতাম। স্বচক্ষে দেখতে পারতাম বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শনগুলো। কেমন অনুভূতি হতো? জারপরনাই সুখি হতাম। বড় হতে হতে ভাবনাগুলো স্বপ্নে পরিনত হয়। স্বপ্নগুলোও বড় হতে থাকে। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনের সুযোগ হয়। ভ্রমনের দ্বিতীয় দিনেই চলে আসি অপেরা হাউজ, হারবার ব্রিজে। সাগরের হীম হাওয়ায় শুনি সেই ছোট বেলার স্বপ্ন কথা। কানে ভাসে সে সময়ের ভাবনাদের শব্দ। আর স্থাপথ্যের ভাষায় দেখি প্রশান্ত পাড়ের স্বপ্নদের। কি অদ্ভুত অনুভূতি, ভালো লাগায় ডুবে যাই। ভাবনার, স্বপ্নের শেষ হয়ে যায় এক মুহুর্তেই।

১৭ জুলাই ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ। গোধূলী লগ্ন। প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জলে সূর্য্যাস্তকাল। একটু পরেই আধাঁর নামবে। পশ্চিমাকাশের সোনালী আভায় সাগরের নীল জল রং বদাচ্ছে প্রতিমুহুর্তে। ‘ডার্লিং হারবার ব্রিজ’ কালের কালি মুছে উপস্থাপনায় দৃড় হয়ে উঠছে। এ যেন এক নব নির্মাণ। নিজস্ব রং, বয়স ছাপিয়ে  অন্য রূপ ধারণ করছে স্থাপনাটি। যখন মেঘাকাশের তলে সিডনি আধাঁরের হারাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন হারবার দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। ভিন দেশিদের নজর কাড়তে রং ছড়াচ্ছে জল-আকাশের তলে। অদূরে সমুদ্র জলে জলকেলিতে হাতছানি দিয়ে ভ্রমনার্থীদের ডাকছে অপেরা হাউজ। নিজস্ব স্থাপথ্য গৌরবে মুগদ্ধ করছে অপেরার নৌ রূপ।

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের প্রধান শহর সিডনি। প্রাচীন এই শহর রাজ্যের রাজধানীও। সিডনির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র অপেরা হাউজ। এর অবস্থান সিডনি সমুদ্র বন্দরের বেনেলং পয়েন্টে। এই বন্দরের নাম আগে ছিলও ম্যাককুইরি বন্দর। নৌকার পাল আকৃতির অপেরা হাউজটি পর্যটকদের আকর্ষণের শীর্ষে রয়েছে। ইউনেস্কো’র বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দেে এটি যুক্ত হয়। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে অপেরা হাউজের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ড্যানিশ স্থপতি জর্ন উটজনের (Architect Jørn Utzon) হাতেই। নির্মাণ ব্যয়বহুল ও স্থপতি উটজনের নকশা ত্রুটি কারণে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রকল্পের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। পরে পিটার (Peter) নামের এক স্থপতি অপেরা হাউজের ত্রুটি সংশোধন করে নির্মাণ কাজ শেষ করেন। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০ অক্টোবর, ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে আধুনিক স্থাপত্যে এ নিদর্শন উদ্বোধন করেন।

অপেরা, হারবার ব্রিজের সৌন্দর্য্য উপভোগে স্বপ্নের কাছাকাছি দাঁড়াই। অনুভূতি কেমন ছিলও তখন? বুঝাবার সুযোগ খুবই কম। শুধু চোখে ভাসছিল ছোট বেলার ক্যালেন্ডারে ছবিগুলো। আর নিজের চোখে মিলিয়ে দেখছিলাম অপেরা-হারবারের স্থাপথ্য। গুলমেলে লাগছিল, ছানাবড়া চোখে এদিক ওদিক দেখছিলাম। প্রকৃতি আর আধুনিক স্থাপথ্যের সম্মিলন ম্যাজিকমুমেন্ট শেষ হলে হয়তো বিলিন হবে সেই তাগিদ ছিলও। দ্রুতই কাটে মুগদ্ধতার সময়গুলো। স্থাপনাগুলোর অবস্থান, স্থাপথ্য নকশার অভিনবত্ব আর সাগর প্রকৃতি- সব মিলিয়ে স্বপ্ন যেনো হাতের মোঠোয় ছিলও খানিক সময়।

অপেরা আর হারবার ব্রিজের দুপাশের পাহাড়ি বসতিগুলোও সিডনির পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ। অপেরার প্রবেশ পথের সমুদ্র ঘাট থেকে ছোট ছোট জলতরিতে সাগর চ্যানেলে ভ্রমনের সুযোগ রয়েছে। দুপাশের পাহাড়গুলোয় গড়ে উঠা বসতির দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন ভ্রমনকারীরা। আমি অবশ্য সে সুযোগ নিতে পারিনি, সময়ের স্বল্পতায়। অপেরা হাউজের পশ্চিম পাশ থেকে হারবার আর পূর্ব থেকে অপেরার প্রেমেই আটকে ছিলাম। সামনের বিশাল খোলা জায়গা ধরে নৌকাকৃতির অপেরার সবদিকে হেটেছি। ভিন্নতর দৃশ্যে নির্মাণ রহস্য, সংস্কৃতির মেলবন্ধন খোঁজেছি। গোধূলী বেলায় আপনিও আসলে এবং রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া থাকলে আপনিও আপ্লুত হবেন।

বানিজ্য শহর সিডনির ঐতিহাসিক স্থাপনা সমূহের পাশের বহুতল ভবনগুলোও যেন এই লগ্নে নিজেদের মেলে ধরছি। গোধূলী আলোর সব রং যেন ধারণ করছিলও ভবনগুলোর গায়ে। দেখে মনে হয় পুরো এলাকায়টাই যেন সূর্য্যাস্তকালের অপেক্ষায় ছিলও সারাদিন। ভবনগুলোর কাঁচের গায়ে আকাশের হারিয়ে যাওয়া আলোরা এসে আসন পেতে বসে। আর সেই আলোয় বন্দর এলাকাকে আলোকিত করে তুলে।

সিডনি হারবার ব্রিজ নির্মাণ শুরু হয় ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯ মার্চ ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ঐতিহাসিক এই ব্রিজটির উচ্চতা ৪৪০ ফুট। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ৩৭৬৬ ফুট। পোর্ট জ্যাকসনে স্টিলের তৈরী ব্রিজ। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম স্টিল-আর্ক ব্রিজের অন্যতম। ব্রিজটিতে রয়েছে চারটি রেলপথ, একটি মহাসড়ক এবং দুটি পায়ে হাটার পথ।

আজকের ভ্রমণ তালিকায় অপেরা হাউজ এবং হারবার ব্রিজই ছিলও। আলো ঝলমলে রাতের সৌর্ন্দয্য দেখতে দেখতে কফি কাপের সঙ্গ নিই। প্রশান্ত মহাসাগরের হিমেল হাওয়া আর কফির তেতো স্বাদে অপেরা-হারবারের বর্ণিল রূপ সৌন্দর্য্য বিশাস শেষ হয়। ঐতিহ্য আর ঐতিহাসিক স্থাপনা ভ্রমন পর্বে সাথে ছিলেন স্বদেশি সহকর্মী শাহজাহান সেলিম ও ইদ্রিছ আলী। একটি সন্ধ্যা, একটি গোধূলী বেলায় প্রশান্ত পাড় থেকে প্রশান্তি নিয়েই ফিরছিলাম ট্রেনে চড়ে।

ভ্রমনকারীরা সিডনি এলে ভ্রমন সূচীতে অপেরা হাউজ ও হারবার ব্রিজ রাখতে পারেন। সিডনির যেখানেই আপনার থাকার ব্যবস্থা থাকুক, আপনি বাস, ট্রেন অথবা প্রাইভেট কারে যেতে পারবেন। স্থান বেঁধে সময় যাতায়াত খরচ হবে। তবে, সময় নিয়ে গেলে সবচেয়ে কম খরচ পড়বে ট্রেনে। ট্রাভেল কার্ড নিয়ে নিলে খুবই অল্প খরচে ঘুরে আসতে পারবেন।

সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে আব্দুল আলিম শাহ | ১৭ জুলাই ২০২৩

Author

Share On:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *