সমাজ কী?
❝যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে মানুষ সংঘবদ্ধ বসবাস করে। এক বা অধিক গোত্র বা সম্প্রদায় সৃষ্টি করে, সেই ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়াকে সমাজ বলে। এটি সমাজ বিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের উদ্দেশ্য ছিল, নিরাপত্তা ও জীবন ধারণ সহজিকরণ করা। মানব সমাজের আদিম রুপে মানুষ বন্য প্রাণী শিকার ও বন্য ফলমুল সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো। কাল পরিক্রমায় সেই সমাজ বিবর্তিত হয়ে Post modern বা উত্তর আধুনিক সমাজের রুপ নিয়েছে।❞
এই ধারণায় সম্পৃক্ত সবাই সবার সাথে সমাজবদ্ধ। পরিপূরক। প্রয়োজন। জীবন ধারনের সহযোগি। এর মধ্যে কেউ কেউ একই বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায়ের হতে পারে। আবার কেউ কারো সম বর্ণ, গোত্র বা সম্প্রদায়ের নাও হতে পারে। ধর্ম, জাতপাতের ভিন্নতা থাকতে পারে। অভিন্ন জাত, ধর্ম, বর্ণ হলেও কারো কারো মধ্যে ভিন্ন মতাদর্শের পার্থক্য থাকতে পারে। শারিরিক গঠন গাঠনেও ভিন্নতা, মিল থাকা স্বাভাবিক। এদের সবে মিলেই একটি সমাজ হয়। বসবাস ও জীবনাচরণ সহজ করতে সমাজ নির্মাণ করে। সমাজে পরিচালিত হয়। সর্ব ক্ষেত্রে সহনশীলতা, ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহিষ্ণু হতে হয়। সমাজ কাঠামোয় বাধ্যতামূলক না হলেও সমাজবদ্ধ কেউ বা কারা বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু কখনই সমাজে বিদ্যমান সবাই সবার বন্ধু হতে পারে না, হয়ও না। জীবনাচরণের জন্য বন্ধুতা একমাত্র নিয়ামকও নয় বলেই আমি মনে করি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কী?
যে মাধ্যমের সাহায্যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ একে অন্যের সাথে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে তাই হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এ মাধ্যম মূলত অনলাইন নির্ভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে আমাদের অঞ্চলে Facebook ব্যাপক জনপ্রিয়।❞
মৌলিক ধারণা সমাজ-এর একটি প্রযুক্তি নির্ভর মাধ্যম এটি। এখানেও জীবনাচার সহজীকরণ, নিরাপত্তা ইত্যাদির উপস্থিতি আছে। এ ধারণায় গুরুত্ব দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘যোগাযোগ’। সামাজিক মৌলিক নিয়ামক সমূহের সাথে অপরাপর দ্রুত ও সহজে যোগাযোগের জন্য এটি কার্যকর। এখানে সমাজের মতো ভিন্ন মত পথের মানুষের উপস্থিতি আছে। একেবারে তেলে জলে মাখামাখির মতো! সামাজিক নিয়ামক প্রতিপালনের মধ্যদিয়ে এখানে একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ নির্মাণ করছেন মাত্র। কিন্তু আমরা এই সমাজ ধারণার প্রযুক্তি মাধ্যমে যুক্ত হওয়াকে মাধ্যমগুলোর স্রষ্টাদের চাপিয়ে দেয়া নিয়মে বন্ধুত্ব বলেই ধরে নিয়েছি, নিচ্ছি। যা কোনভাবেই সমাজ বিজ্ঞানের বর্ধিত ধারণায় সম্পৃক্ত না।
এমতাবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ততা যৌক্তিক কারণেই বন্ধুত্বের মধ্যে পড়ে না বলেই আমি মনে করি। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত সাড়ে চার হাজার মানুষের সাথে। কিন্তু আমার মতপ্রকাশে ক্রিয়াশীল মানুষ খুবই নগন্য। শতাংশের হিসেবে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। বাকিরা কী করেন? গুপ্তচর ভিত্তি? এদের মধ্যে ভিন্ন মতের মানুষ আছেন, জানি। অভিন্ন মতেরও আছেন। যুক্ততার ১৪ বছরের মাথায় এসে নিকাশ করি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদতে আমার কোন বন্ধু আছেন কী? নাই।
ফলে, সমাজ ধারণার মৌলিক নিয়ামক পর্যালোচনার প্রয়োজন বোধ করি। যৌক্তিক কারণেই বন্ধুত্বের মতো বিশাল সম্পর্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের “যুক্ততার” মাঝে গুলিয়ে ফেলছি বিশ্বাস করতে চাই। এখানে সত্যিকার অর্থে সমাজের মতোই জীবনাচরণ ইস্যুতে যোগাযোগ হচ্ছে কেবল, বন্ধুত্ব নয়। “সমাজ” ধারণার নিরাপত্তা যতখানি নিশ্চিত হয় “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের” যুক্ততায় বরং ব্যক্তির নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে যতোখানি বন্ধুত্ব তার চেয়ে বেশি গুপ্তচর ভিত্তি হচ্ছে বেশি। এখানে বর্ণ, ধর্ম, জাতি, দল, উপ-দলীয় বৈষম্য, গোপনীয় গোত্র চর্চা নিরবে হচ্ছে। এর কতোশত প্রমাণ দেখেছি আমরা। তবুও কি যুক্ততা কে বন্ধুত্ব বলে স্বীকৃতি দিব? দিতে পারি না।